রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৮ অপরাহ্ন

মার্কিন-ব্রিটিশ সেনা হত্যায় তালেবানদের অর্থ দিয়েছে রাশিয়া

প্রতীকী ছবি।

আন্তর্জতিক ডেস্ক : আফগানিস্তান মিশনে থাকা ন্যাটোর মার্কিন ও ব্রিটিশ সেনাদের হত্যার জন্য গোপনে আফগান তালেবানদের মদদপুষ্ট বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকে অর্থ সহায়তা ও পুরষ্কার প্রস্তাব দিয়েছিল রাশিয়া। শুধু তাই নয়, রুশ সেনাবাহিনীর বিশেষ একটি গোয়েন্দা ইউনিটের প্রত্যক্ষ তৎপরতায় এই গোপন হত্যাচুক্তির ব্যাপারে একাধিকবার অর্থ বিনিয়োগের ঘটনাও ঘটেছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর বিশেষ অনুসন্ধানে এসকল তথ্য উঠে এসেছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।

শনিবার (২৭ জুন) ব্রিটিস সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান প্রকাশিত খবরের তথ্য মতে, শুক্রবার (২৬ জুন) গোয়েন্দাদের একটি সূত্রকে উল্লেখ করে আমেরিকার এই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গত বছর আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের উপর হামলা চালানোর জন্য গোপনে তালেবানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রাশিয়া। তাদের মদতপুষ্ট বিভিন্ন আফগান জঙ্গি সংগঠনের সাহায্যে হামলা চালানো হয়। এর জন্য ইউরোপে সক্রিয় থাকা রাশিয়ান সেনার একটি গোয়েন্দা ইউনিট জঙ্গিদের পুরস্কারও দেবে বলে প্রস্তাব দিয়েছিল। ইসলামিক জঙ্গি বা অন্য স্বশস্ত্র দুষ্কৃতীরা ওই রাশিয়ান গোয়েন্দাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে চলে। এমনকি মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা চালানোর জন্য ইতিমধ্যে টাকাও নিয়েছে তারা।

দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ২০১৮ সালে স্যালিসবারিতে রুশ গোয়েন্দাদের মদদে পরিকল্পিতভাবে সের্গেই স্ক্রিপ্যাল নামে দেশটির হয়েকাজ করা এক গুপ্তচরকে হত্যা করা। নিহত এই গুপ্তচরের মাধ্যমে একাধিকবার মার্কিন ও ব্রিটিশ সেনাদের হত্যার জন্য তালেবান জঙ্গীদের অর্থ প্রদান করে রাশিয়া।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, রুশ সেনা-গোয়েন্দা বিভাগের ‘২৯১৫৫ জিআরইউ’ নামের বিশেষ শাখার তদারকিতে এই গোপন পরিকল্পনা কার্যকর করা হচ্ছিলো। কয়েক মাস আগে হোয়াইট হাউসে দেয়া এক বিবৃতিতে এমন ইঙ্গিত প্রদান করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যার নথি ব্রিটিশ সরকারের হাতে পৌঁছে গত সপ্তাহে। স্পর্শকাতর এই গোপন গোয়েন্দা নথির ব্যাপারে এত বিলম্বে জানানোর কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ব্রিটেন।

এদিকে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এই প্রতিবেদনের তথ্য বানোয়াট ও মিথ্যা দাবি করে মার্কিন ও ব্রিটিশ সেনা হত্যায় তালেবানদের সঙ্গে গোপন চুক্তি সম্পাদনের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া। এছাড়া এ সকল তথ্য অসত্য বলে দাবি তুলেছে তালেবান নেতারাও। তবে ন্যাটোর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদস্থদের দাবি, ন্যাটোর বিরুদ্ধে রাশিয়ার নেতিবাচক মনোভাব নতুন কিছু নয়।

ব্রিটিশ কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, এ প্রসঙ্গে আরো আগে থেকেই অবগত ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে পুতিনের মদদ নিয়ে ক্ষমতায় আসা ট্রাম্প ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষায় রাশির বিরুদ্ধে পাওয়া এসকল গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশ করেননি। আর ট্রাম্পের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা অনুসন্ধানের রিপোর্ট গত অক্টোবরে মাসেই সম্পন্ন করা হলেও সময় সব আড়ালে রেখেছিলেন থেরেসা মে ও বরিস জনসন।

বিস্ফোরক এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা নিয়ে ক্ষমতাসীন বরিস জনসন সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগলে দিতে শুরু করেছেন বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সাংসদ ও ব্রিটেনের পররাষ্ট্র বিষয় ছায়া মন্ত্রী লিসা নন্দি সরাসরি অভিযোগ তুলে বলেছেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ সকল গোয়েন্দা নথি প্রসঙ্গে এবং রুশ পরিকল্পনার ব্যাপারে তথগ জেনেও নিরব ছিলেন। কারণ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পান।
জানা গেছে, মার্কিন সংবাদমাধ্যমে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে মুখ খোলেনি হোয়াইট হাউস। চুপ করে রয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং জাতীয় গোয়েন্দা দপ্তরের কর্মকর্তারাও। তবে শীঘ্রই এ ব্যাপারে হোয়াইট হাউসের নির্দেশনা আসবে বলে আশেয়াস দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দীর্ঘ প্রায় ২০ বছরের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর এই বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি আমেরিকা ও তালিবানদের মধ্যে শান্তি চুক্তি হয়। তার আগে ২০১৯ সালে ২০ জন মার্কিন সেনাকে হামলা চালিয়ে হত্যার ঘটনার পিছনে রাশিয়ার হাত ছিল বলে অভিযোগ মার্কিন গোয়েন্দাদের। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ব্রিটিশ ও মার্কিন সেনাদের হত্যা সংক্রান্ত রুশ গুপ্ত পরিকল্পনার এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আনলো নিউ ইয়র্ক টাইমস।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com